নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীর রূপাতলী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা চাকরিজীবী সবুজ রহমান ও সুমী আক্তার দম্পতির দুই কিশোরী কন্যা সানাম ও সানিয়া।স্কুল মাঠে খেলতো তারা। এখন স্কুলে যাওয়া হয় না, তাই মোবাইলে ভিডিও গেমস খেলে সময় কাটে তাদের। আবার যখন একঘেয়েমি এসে যায়, তখন চলে দুই বোনের খুনসুটি। করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই এভাবে ঘরবন্দি শিশু, কিশোর-কিশোরীরা।এ অবস্থায় তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হওয়ার শংকায় সবুজ রহমান ও সুমী আক্তার দম্পতি। তবে যতটুকু সার্মথ সে অনুসারে চার দেয়ালের ভেতরেই তৈরী করে দিয়েছেন খেলার জগৎ। শুধু তারা নন; নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন গোরস্থান রোড এলাকায় ব্যবসায়ী কাওসার হোসেন। এক পুত্র ও এক কন্যার জনক তিনি। আগে সন্তানরা সকালবেলা স্কুলে যাওয়া আর বাসায় ফিরে পাশের মাঠে ঘন্টাদুয়েক খেলতো। বর্তমানে তাদের বিনোদনের মাধ্যম টেলিভিশনে কার্টুন দেখা আর এক রুম থেকে অন্য রুমে খেলনার গাড়ি চালানো।
মুন্সী গ্যারেজ এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা ফাতেমা বেগম বলেন, বাচ্চাদের বাইরে নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। ঘরে বন্দি থাকতে থাকতে তারা খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। সারাক্ষণ মোবাইল-ট্যাব নিয়ে থাকার কারণে এসবের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। এদিকে নগরীর কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে, খাবার রুম, বসার রুম বা গাড়ি রাখার গ্যারেজ নতুবা ছাদ হয়ে উঠেছে শিশুদের খেলার মাধ্যম। কেউ ইচিং-বিচিং, কেউবা কানামাছি আর কেউ ঘুড়ি উড়িয়ে কিংবা নিজেদের মধ্যে সমাবেশ ঘটিয়ে খোশগল্পে মেতে উঠেছে। তেমনি স্কুল পড়ুয়া শিশু হুমায়রা, নাসিমা, পিংকি, নাফিস ও হাসিব- পাঁচ বন্ধু প্রতিদিন বিকেল হলেই খেলছে তাদের বাড়ির ছাদে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: তপন কুমার সাহা মনে করেন, এ সময়ে শিশুদের দিকে বিশেষ মনোযোগ ও তাদের হাসিখুশি রাখার উদ্যোগ নিতে হবে অভিভাবকদের। ঘরবন্দি অবস্থায় থাকতে গিয়ে শিশুদের মধ্যে মানসিক অবসাদ তৈরি হতে পারে। শিশুরা যাতে মানসিক চাপমুক্ত পরিবেশ পায় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। করোনার এই সময়ে শিশুদের সঙ্গে সময় কাটানো, বিভিন্ন ইনডোর খেলায় ব্যবস্থা রাখা, রং পেনসিল দিয়ে আর্ট বোর্ডে ছবি আঁকার ব্যাপারে উৎসাহিত করা এবং খেলার ছলে পড়ালেখা করানো যেতে পারে। এছাড়া শিক্ষামূলক বিভিন্ন গল্প শোনানো যেতে পারে শিশুদের। চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি থাকতে থাকতে শিশুরাও হাঁপিয়ে উঠছে, তাই তারা বিরক্ত হতে পারে, রাগ করতে পারে, হতাশ হতে পারে, দুষ্টুমি বেড়ে যেতে পারে। এটা স্বাভাবিক। এ কারণে বাচ্চাকে বকাঝকা না করার জন্য অভিভাবকদের প্রতি পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
Leave a Reply